রফিক মোল্লা:
দেড় বছর আগেও হুইলচেয়ারে বসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করতেন ভুমিহীন প্রতিবন্ধী ছানোয়ার (৪৫)।টাকার জন্য সবার কাছে হাত পাততে হতো। আনেকেই দিতেন আবার অনেকেই অবহেলায় মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে মান সন্মান ক্ষুণ্ন করে দিনশেষে যা পেতেন তাতেই কোনোরকমে চলত পরিবার নিয়ে । কিন্তু এখন আর সে দিন নেই।
হঠাৎ-ই বদলে গেছে সব। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে ছানোয়ার এখন একজন মুদি দোকান ব্যবসায়ী। মানবতার ফেরিওয়ালা মামুন বিশ্বাসের ফেসবুকের সংগ্রহীত আর্থিক সহযোগিতায় সম্মানের সাথে ব্যবসা করে যা আয় হচ্ছে তাতেই ভীষণ খুশি তিনি ও তাঁর স্ত্রী।
যমুনার চড়ে নিজের ঠিকানা হারিয়ে গিয়েছে। তাই দীর্ঘ দিন ধরে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরে রুপপুর নতুন পাড়া ভাড়া বাসায় থাকেন ছানোয়ার হোসেন।ছানোয়ারের মুদি দোকানটি নিজ ভাড়া বাড়ির সামনেই।প্রতিদিন হুইলচেয়ার দোকানে যাতায়াত করেন তিনি।
আজ শনিবার সকালে ছানোয়ার হোসেন কএ দেখতে গিয়ে সেখানে বসেই কথা হয় তাঁর সাথে।আলাপকালে তিনি হাসিমুখেই তাঁর জীবনের উত্থান পতনের গল্প বলেন। তিনি জানান, তাঁর জীবনের শুরুটা এত ভাল ছিল । কর্মজীবনের শুরুতে উপজেলার পাইলট স্কুল মাঠে ফুচকার দোকানে কাজ করতেন এবং ভাল বেতন পেতেন।
কিন্তু জীবনের সবকিছু বদলে দেয় একটি দুর্ঘটনা। ২০১৪ সালে স্টোক করেন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এর পর থেকে তাঁর চিকিৎসায় জন্য সব টাকা ফুরিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি।পাশাপাশি মানুষের সাহায্যর টাকা দিয়েও চিকিৎসা চালিয়ে যান। এসময় দুই পা পঙ্গু হয়ে যায়।
সংসারে স্ত্রী ছাড়াও ২ ছেলে মেয়ে তাঁর। সংসারে অভাব তীব্র হয়ে উঠে। দিন দিন আর্থিক দৈন্যতা প্রবল হয়ে ওঠলে ও চিকিৎসার জন্য টাকা ও বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে অসুস্থ অবস্থায় হুইলচেয়ার বসে ভিক্ষাবৃত্তিতেই নামতে হয় তাঁকে।
ছানোয়ার জানান, পৌর শহরে ঘুরে এবং যাকে সামনে পেতেন তার কাছেই টাকার জন্য হাত পাততেন তিনি।এমনিভাবে একদিন ভিক্ষার জন্য হাত পাতেন সাংবাদিক তুহিন জামানের কাছে।এসময় তুহিন জামান তাঁর ভিক্ষাবৃত্তির কারণ জানতে চান কথায় কথায় জানতে পারেন সব। সব শুনে তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা মামুন বিশ্বাস কে জানান।
গত বছরের প্রথম দিকে মামুন ছুটে জান প্রতিবন্ধী ছানোয়ার বাড়িতে, তার বিস্তারিত অবস্থা ভিডিও করে ফেসবুকে সাহায্যর আবেদন চেয়ে পোষ্ট দেন। ফেসবুক থেকে ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহীত হয় সেই টাকা দিয়েই প্রতিবন্ধী ছানোয়ার মুদি দোকান করে দেন।
প্রতিবন্ধী ছানোয়ার আরো বলেন, আমাকে বাড়ির সামনে মুদি দোকান করে দেবার পর সেই দোকানে নানারকমের মুদি দ্রব্য রেখে বিক্রি করতে থাকি। গত কয়েক মাসে গ্রামের ভেতরের এই দোকানটি বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেছে।
সববয়সী মানুষ এখানে আসেন কেনাকাটা করতে। এখন তিনি দৈনিক গড়ে ৩-৪’শ টাকা আয় করেন। এতে তার সংসার চলছে অনায়াসে। এজন্য আল্লাহ কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানান পাশাপাশি যারা তাকে সাহায্য করছেন তাদের জন্য দোয়া করেন ।
আজকের এ দিন বদলের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান, মানবতার ফেরিওয়ালা মামুন বিশ্বাসকে ।
তাঁর এ ব্যবসায় সার্বিক সহযোগিতা করেন স্ত্রী দুলু খাতুন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর স্বামীর চিকিৎসায় নিঃস্ব হয়ে যাই আমরা।এখন আবার নিজের চোখের সামনে দোকান করতে পারছে। যা আয় হচ্ছে তাতে ভালোভাবেই চলছি আমরা। তিনিও সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানান।এখন মামুন বিশ্বাসের সহযোগিতায় তিনি মুদি দোকান পেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এতেই আমি খুশি।
মামুন বিশ্বাস ফেসবুকের মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ দিয়ে
দেশের বিভিন্ন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। ছানোয়ার আন্তরিকতার সাথে মুদি দোকান পরিচালনা করে এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে চালিয়ে গেলে একদিন তিনি আরো অনেক উন্নতি করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
Desing & Developed BY লিমন কবির
Leave a Reply